অফলন্ত গাছকে ফলবতী করতে করণীয় ধাপগুলো

এসএসসি(ভোকেশনাল) - ফ্রুট এন্ড ভেজিটেবল কাল্টিভেশন-২ - দ্বিতীয় পত্র (দশম শ্রেণি) | | NCTB BOOK

গাছ ফল দেয়ার বয়সে উপনীত হওয়ার পরও যদি একেবারে অথবা কাঙ্ক্ষিত পরিমাণ ফল না দেয় তাহলে সেই গাছকে অফলন্ত গাছ বলা হয় । অফলন্ত গাছকে ফলবর্তীকরণের প্রক্রিয়াসমূহ আলোচনা করার আগে ফলন্ত ও অফলন্ত গাছ কী এবং ফল না ধরার কারণ কী তা আমাদের জানা উচিত ।

ফলন্ত গাছ কোন গাছ নিদৃষ্ট বয়সে উপনীত হওয়ার পর যদি পরিমিত ফুল ও ফল ধারণ করে এবং ফুল সংগ্রহ পর্যন্ত ফল বহন করে তখন তাকে আমরা ফলন্ত গাছ বলি । গাছে ফুলের মুকুল বিকশিত হওয়ার পর তা প্রস্ফুটিত হয় এবং পরাগায়ণ ও নিষিক্তকরণের পর ফুলের গর্ভাশয় স্ফীত হয়ে ফলে পরিণত হয়। ফলন্ত গাছে শুধু পরিমাণ । মত ফুল ফলই ধরে না, ফল পরিপক্ক হওয়া পর্যন্ত তা বহন করে। এটি ফলন্ত গাছের প্রধান বৈশিষ্ট্য । আমরা দেখি অনেক গাছে প্রচুর পরিমাণ ফুল ও ফল ধরে। কিন্তু সেই ফল পরিপক্ক হওয়ার আগেই ঝরে পড়ে । এ ক্ষেত্রে গাছটিকে ফলন্ত বলা যাবে না । কারণ গাছটি যে ফল বহন করেছিল তা পরিপকৃতার আগেই ঝরে পড়েছে এবং তা চাষীর কোন কাজেই লাগেনি ।

অফলন্ত গাছ - কোন গাছ ফল দেয়ার বয়সে উপনীত হওয়ার পর যদি ফল না দেয়, ফুল, ফল ঝরে পড়ে, কম পরিমাণ ফল ধারণ করে অথবা অনিয়মিত ও ত্রুটিযুক্ত ফল দেয় তখন সেই ফল গাছকে আমরা অফলন্ত গাছ বলি ।

ফল না ধরার কারণ

গাছে ফলোৎপাদন ঠিকমত হয় না বা ফল ধরে না- এরুপ সমস্যা প্রায়ই দেখা যায়। এ অবস্থার পেছনে নানা কারণ থাকতে পারে । বিভিন্ন কারণগুলোকে দুটি শ্রেণিতে বিভক্ত করা যেতে পারে । যথা-

ক) অভ্যন্তররীণ কারণ ও 

খ) বাহ্যিক কারণ

ক) অভ্যন্তররীণ কারণ (Internal factors)

বিভিন্ন গাছে যে অভ্যন্তররীণ সমস্যার কারনে ফল ধারণে বিলম্ব হয় বা আদৌ ফুল ও ফল হয় না বলে ধারণা করা হয় সে সমস্যা গুলো হলো

১। ফুলের অসম্পূর্ণতা (Imperfect flower) 

২। অসম স্ত্রী কেশর 

৩। ফুলের পুং ও স্ত্রী কেশরের পূর্ণতার সময়ের অমিল 

৪ । পুষ্প কুঁড়ির পতন 

৫ । পরাগ রেণুর হীন বলতা 

৬। শংকরায়নজনিত বন্ধ্যাত 

৭ । বংশগতিজনিত অসংগতি

৮ । রেণু নলের ধীরে বৃদ্ধি প্রাপ্তি  

৯ । গাছের অভ্যন্তরস্থ খাদ্যোপাদানের জটিলতা 

১০। কার্বোহাইড্রেট ও নাইট্রোজেনের অনুপাতে অসামঞ্জস্য

১। ফুলের অসম্পূর্ণতা: অধিকাংশ ফলের গাছে ফুল সম্পূর্ণ থাকলেও কতগুলি গাছ একাবাস পুল্লী (Monocecious) এবং কতগুলি গাছ ভিন্নবাস পুল্লী (Diocious) হয়ে থাকে । একলিঙ্গ ফুলের বেলায় একটি ফুলে অপর ফুলের পরাগ রেণুর সাহায্যে পরাগায়ন হয়ে থাকে । খেজুর, তাল, পেঁপে, ডুমুর, জাপানি পার্সিস, মাস্কাডিন আড্ডর এবং স্ট্রেবেরী এর উদাহরণ । কোন কোন কারনে স্ত্রী পুষ্পের কাছাকাছি পরস্পর অবস্থান না থাকলে পরাগায়ণ ও গর্ভধারণ সম্ভব হয় না ।

২। অসম স্ত্রী কেশর (Heterostyle): অনেক সময় উভয়লিঙ্গ ফুল হওয়া সত্ত্বেও গভদও ছোট এবং পুংকেশর বড় হয় অথবা বিপরীত ধরনের হতে পারে। এরূপ অবস্থায় স্বপরাগায়নে ব্যাঘাত ঘটে এবং ফল ধারণে সমস্যা দেখা দেয় । উদাহরণ- কাঁঠাল। 

৩। ফুলের পুং ও মন্ত্রী কেশরের পুর্নতার সময়ে অমিল: কোন কোন পুংকেশর ত্রীকেশর অপেক্ষা আগে পূর্ণতা লাভ করে অথবা বিপরীত ঘটনাও ঘটে। এক্ষেত্রে স্বপরাগায়নের ব্যাঘাত ঘটে। উদাহরণ- নারিকেল, এ্যাভাকোডো, শরীফা ইত্যাদি । 

৪। পুষ্প কুঁড়ির পতন: অনেক গাছে অনেক সময় পুষ্পকুঁড়ি ফোটার আগে ফুল ঝরে যায় । উদাহারণ-টমোটো, আড্ডর, বিলাতী বেগুন ও স্টবেরি ইত্যাদি । 

৫। পরাগরেণুর হীন বঙ্গতা: কোন কোন গাছের ফুলে পরাগরেণুর উৎপাদন হয় অতি সামান্য এবং অধিকাংশ রেণু অকেজো হয় । এক্ষেত্রে কিছু কিছু ফল ধরেও তা বীজশূন্য হয় । উদাহারণ- মাস্কাতে জাতের আঙ্গর । 

৬। শংকরায়নজনিত বন্ধ্যত্ব: দুটি অতি দূরবর্তী জাতের মধ্যে শংকরায়ন ঘটলে এটি স্বপরাগায়নে অসমতা ঘটাতে পারে। কখনও কখনও সংকর শ্রেণির গাছে ধনিষেকী অপেক্সো অধিক পরনিকেষী ধরনের হতে পারে । 

৭। বংশগতজনিত অসংগতি: এমন কিছু ফল গাছ আছে যার ফুল নিজের রেণু বা একই জাতের অন্য গাছের রেনু দ্বারা পরাগয়িত হয় না উদাহরণ- বাদাম, আপেল, নাশপাতি ইত্যাদি । 

৮। রেণুনলের ধীর বৃদ্ধিঃ ফুলের গর্ভমুণ্ডে রেনু পতিত হওয়ার পর গর্ভদণ্ডের ধীর বৃদ্ধি ও ডিম্বকের মাথেমিলিনে বিলম্ব হলে ফল ধারণ বিঘ্নিত হতে পারে। উদাহারণ- নাশপাতি পীচ, পাম ইত্যাদি । 

৯। গাছের অভ্যরন্থ খাদ্যোপাদানের জটিলতা: আভ্যন্তরীণ খাদ্যাবস্থা বহু ক্ষেত্রেই গাছের ফলোৎপাদনের দুর্বলতা কিংবা অসমর্থতার জন্য দায়ী। ফল গাছে পুষ্পবস্থায় সময়ের আগে বা পরে অভ্যন্তরস্থ খাদ্যোপাদান স্বাভাবিক না থাকলে বহু ফুল ঠিকমত পরাগায়ণে ব্যর্থ হয় । 

১০। কার্বোহাইড্রেট ও নাইট্রোজেনের অনুপাত: গাছের কায়িক বৃদ্ধি ও ফলাৎপাদন ক্ষমতোক প্রভাবান্বিত করে । শুধু পরিমাণই নহে, বরং এদের পরিমাণের অনুপাত যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ। খুব ভাল ফলন পেতে হলে কার্বোহাইড্রেট অধিক পরিমাণে এবং নাইট্রোজেন কিছু কম পরিমাণে এরূপ অনুপাতে থাকা দরকার ।

(খ) বাহ্যিক কারণ (External Factors)

অনেক সময় ফলের গাছ বড় হওয়ার পরও ফুল ধারণ করে না। আবার বয়ক গাছও নিয়মিত এবং আশানুরুপ পরিমান ফুল উৎপাদন করেন। এ সকল ক্ষেত্রে গাছের অভ্যন্তররীণ কারণের পাশাপাশি কিছু বাহ্যিক কারণ দায়ী ।

বাহ্যিক কারণগুলো যথা-

১। উত্তাপ ২ । আলো ৩ । আর্দ্রতা ৪। কুয়াশা ৫। বৃষ্টিপাত ৬। বায়ুবেগ ৭ । গাছ বা জমির অবস্থান ৮। ঋতু ৯। গাছের খাদ্য সরবরাহ ১০। গাছের বয়স ও প্রান শক্তি ১১। অঙ্গহটাই ১২। কলম করা ১৩। রোগ ও পোকা মাকড়ের আক্রমণ ১৪। জন্ম ত্রুটি ইত্যাদি ।

১। উত্তাপ (Temperature): অতিরিক্ত উত্তাপে ফুল ঝরে যেতে পারে, ফুলের গর্ভমুণ্ড শুকায়ে যেতে পারে, গর্ভমুণ্ডের আঁঠালো ভাব নষ্ট হতে পারে ইত্যাদি । বেশি ঠান্ডায় মৌমাছি মৌচাক ছেড়ে কোথাও যেতে চায়না, ফলে পরাগায়ণ ঠিকমত হয় না । অধিক ঠান্ডায় কলা, পেঁপে, ইত্যাদি গাছে ফল ধরা ব্যাহত হয় । 

২। আলো (Light): ছায়াময় স্থানে প্রায় সকল গাছের ফলন কম হয়। দিনের দৈর্ঘ্য কম বেশি হলে আলোর তারতম্য ঘটে । ফলে টমেটো, স্ট্রোবেরী ইত্যাদির ফল ধরা বিঘ্নিত হয় । 

৩। আর্দ্রতা (Humidity): মাটিতে রসের আধিক্য এবং বাতাসে কম আর্দ্রতায় ফল ঝরে যেতে পারে । বাতাসে বেশি আর্দ্রতায় আপেল ঝরে যায় । মাটিতে রসের অভাব হলে আম, লিচু, ইত্যাদি ঝরে যায় । 

৪। কুয়াশা: আম ও লিচুর ফুল আসার সময় বেশি কুয়াশা পড়লে ফুল ঝরে যায়। অনেক যফলের ক্ষেত্রেই অধিক কুয়াশায় ফল ঝরে যায় । 

৫। বৃষ্টিপাত (Rainfall): অতিমাত্রায় বৃষ্টিপাতে ফুলের প্রাগরেণু ও গর্ভমুন্ডের আঁঠা ধুয়ে যায় । রেণু ফুলে ফেঁপে মোটা হয়ে বৃষ্টির সময় ফেটে যায় পরাগায়নে সাহায্যকারী পোকামাকড়ের ক্রিয়া লাপ কমে যায় ।

৬। বায়ুবেগ (Wind Velocity): বায়ু জোরে প্রবাহিত হলে ফুলের ক্ষতি হয় । কেননা পরাগরেণু বেশি দূরে ছড়ায়ে যায়, উপকারী পাকামাকড় চলাচল ব্যাহত হয় । 

৭। গাছ ও জমির অবস্থান: হয়তো স্থানীয় উত্তাপ, আর্দ্রতা, আলো এবং মাটির খাদ্যোপাদনের কারণে বরিশাল এলাকায় আমড়া, পেয়ারা, নারিকেল ভালো হয় অথচ অন্যস্থানে সুবিধাজনক হয় না। অনুরূপ রাজশাহী ও দিনাজপুরে আম ও লিচু ভালো হয় । অন্যত্র ভালো হয় না । 

৮। ঋতুঃ শীতকালে পেঁপে, কলা ইত্যাদি কম টিকে এবং ফল ছোট হয় । আবার আম লিচুর প্রথমভারের অপেক্ষা শেষের দিকের ফুলে বেশি স্বপরাগায়ন হয় । 

৯। গাছে খাদ্য সরবরাহ (Nutrient Supply): মাটিতে সঠিক পরিমাণের বেশি গাছের খাদ্যোপাদান থাকলে ফল উৎপাদন ব্যাহত হয়। আবার মাটিতে গাছের খাদ্যোপাদানের অভাবে গাছ দুর্বল হয়ে ফুল ও ফল ধারণে অসুবিধা হয় । অক্টোবর - নভেম্বর মাসে আমগাছে বেশি পরিমাণ ইউরিয়া সার দিলে ফল ধারণে সমস্যা হয় । অতিরিক্ত সার প্রয়োগ করা হলে ফুল দেরিতে হয় এবং গাছে পোকা মাকড়ের আক্রমণ বেশি হয় । গাছে ফুল হওয়ার সময় বা ৭-১০ দিন আগে নাইট্রোজেন জাতীয় সার ব্যবহার করা হলে ফল টিকে থাকা অনেক গুণে বেড়ে যায় । 

১০। গাছের বয়স ও প্রাণশক্তি (Age and vigour of plant): কম থাকলে বয়সী নারিকেল, পেঁপে, সুপারি, আঙ্গুর ইত্যাদি গাছে প্রচুর ফুল ধরে ঝরে যায় । গাছে আবার অতিরিক্ত প্রাণশক্তি থাকলে দেরিতে ফুল আসতে পারে । 

১১। অঙ্গ ছাঁটাই (Pruning): লিচু, জাম, আঙ্গুর, কুল ইত্যাদি গাছের অজ্ঞা ছাটাই করা না হলে ফল ধারণ মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়। আবার গাছ ভেদে অতিরিক্ত অঙ্গ ছাটাই ফল ধারন ক্ষমতা কমিয়ে দেয় । 

১২। কলম করা (Grafting): কলম করার সময় আদি চারা (স্টক) সঠিকভাবে নির্বাচন করা না হলে পরবর্তীতে কলমের গাছে ফলন কম হতে পারে। কাজেই সঠিক ষ্টক আগেই নির্বাচন করতে হবে।

১৩। রোগ ও পোকা মাকড়ের আক্রমণ (nsects and Diseases): সাধারণত কীট ও রোগের আক্রমণে ফলন কমে যেতে পারে । আমের হপার পোকা আম গাছের সম্পূর্ণ ফুল ঝরায়ে দিতে পারে। থ্রিপসপোকা নাশপাতি, আপেল ইত্যাদির ফুল বিনষ্ট করে দেয়। লাল পিপড়া, ইদূর নারিকেল ফল নষ্ট করে দেয় । 

১৪। ঔষধ ছিটানো (Spraying): গাছ পুষ্পিত হওয়ার কালে গাছে ঔষধ ছিটালে ফলনের বিশেষ ক্ষতি সাধিত হতে পারে। ঔষধ সরাসরি রেণু কিংবা গর্ভমুণ্ডের অনিষ্ট করে, অথবা পরাক্ষেভাবে মৌমাছি কিংবা অন্যান্য রেনু বাহক কীটের কাজে ব্যাঘাত ঘটায় । আপেলে ক্রমাগত লাইম সালফার ছিটানোর ফলে ফলন প্রায় শতকরা ৫০ ভাগ কমে যায়। সঠিক সময়ে সঠিক ঔষধ ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে ।

অফলত গাছকে ফলবতী করার কৌশল

উদ্ভিদের ফল ধারণ প্রক্রিয়া অত্যন্ত জটিল এবং বিভিন্ন অভ্যন্তররীণ ও পারিপার্শ্বিক অবস্থা দ্বারা প্রভাবিত হয়ে থাকে । কোন কোন ক্ষেত্রে জন্মগত ত্রটির কারণে নিখুঁত ফল পাওয়া যায় না। ফল গাছের অকলাৎেপাদন সমস্যাকে তিনটি তরে ভাগ করা যায়। যথা-ক) ফল গাছে নিয়মিত ও যথাসময়ে ফুল না আসা খ) ফুলের পরাগায়ন ও নিষেকের প্রক্রিয়ায় ব্যর্থতা এবং গ) ফুল ঝরে পড়া। গাছে ফুল না হওয়ার সমগত সমস্যাকে সহজে বা স সমাধান করা সম্ভব নয় । তবে আগে থেকে সঠিক সময়ে সঠিক পদক্ষেপ নিলে কিছু ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে এগুলো এড়ানো যেতে পারে এবং গাছকে ফবর্তী করা যেতে পারে। অফলন্ত গাছকে ফলবর্তীকরণের কয়েকটি পদক্ষেপ নিচে আলোচনা করা হলো :

১। বিপরীত লিঙ্গের গাছ জন্মানো এবং কৃত্রিম পরাগায়ন (Growing plants of opposite sex and artificial pollination): যে সব গাছে স্ত্রী ও পুরুষ ফুল ভিন্ন ভিন্ন গাছে হয় যেমন তাল, খেজুর, পেষ্টে ক্ষেত্রে বাগানে একটি নির্দিষ্ট অনুপাতে স্ত্রী ও পুরুষ গাছ লাগিয়ে ফল না অসা ও সমস্যার সমাধান করা যেতে পারে । অনেক সময় কৃত্রিম উপায়ে পরাগায়ণ ঘটিয়ে এ সমস্যার সমাধান করা যায় । যেমন- পেঁপে গাছে কৃত্রিম উপায়ে পরাগায়ন ঘটিয়ে ফল ধারণ করানো যায় । 

২। অনেকগুলো গাছ একসাথে জনাননা (Growing mummerous plants): ফুলের মধ্যে অসমতা থাকলে বিভিন্ন ধরনের ফুলসমৃদ্ধ গাছ বাগানে জন্মাতে হয় । 

৩। পরাগরেণু সরবরাহকারী গাছ লাগানো (Use of polinizer plants): একই জাতীয় গাছের মধ্যে স্বপরাগায়নে অসুবিধা হলে সেখানে ভিন্ন ভিন্ন জাতের গাছ লাগানো উচিত। স্বপরাগায়নে সুবিধার জন্য রেণু সরবরাহ করতে পারে এমন গাছের কলম করে দেয়া যেতে পারে। 

৪। সুষম সার (Use of balance fertilizer): গাছের খাদ্য ও পুষ্টি যাগোন স্বাভাবিক রাখার জন্য নাইট্রোজেন, ফসরাস, পটাশ, ক্যালসিয়াম, জিংক, বারেন ইত্যাদি সার সুষম মাত্রায় ব্যবহার করা উচিত। 

৫। কার্বোহাইড্রেট ও নাইট্রোজেন উপযুক্ত অনুপাতে থাকা (Preserving correct CN Ratio): গাছে কার্বোহাইড্রেট গুনাইট্রোজেন সঠিক অনুপাতে থাকলে ফল বেশি ধরে । শিকড় হেঁটে বাকলা কেটে, ফল পাতলা করে, ধুয়া প্রয়োগে সার ও সেচ দিয়ে এবং পরিচর্যার মাধ্যমে এই অনুপাত সঠিক মাত্রায় আনা যায় ।

৬। শিকড় ঘেঁটে দেয়া (Root pruning): বাগানে মাটি চাষ করে, গাছের গোড়া হতে কিছুদূর দিয়ে নালা কেটে বা চারদিকে ভাবে নালা কেটে শিকড় কমানো যায় । গাছে ফুল হওয়ার এক থেকে দুই মাস আগে মাটি শুকনা থাকা অবস্থায় বিভিন্নভাবে শিকড় ছোট দেয়া হয় । তবে এক থেকে দুই সপ্তাহ মাটি আলগা রেখে তারপর প্রয়োজনীয় পরিমাণ সার মিশিয়ে শিকড় ঢেকে দিতে হয়। এর ফলে গাছে অতিরিক্ত নাইট্রোজেনের পরিমাণ কমে যায় এবং পাতায় খাবার তৈরি হয়ে কার্বোহাইড্রেটের পরিমাণ বেড়ে যায় । পরবর্তী ফল ধরার জন্য যা সহায়ক হয় । 

৭। চক্রাকার বাকল কেটে দেয়া (Ringing): গাছের প্রধান শাখাসমূহে বা কাণ্ডের গোড়ায় চক্রাকারে বাকল কেটে তুলে দেয়া হয় । এতে নাইট্রোজেন গ্রহণ ও বিভিন্ন অংশে কার্বোহাইড্রেট প্রেরণ ব্যাহত হয় । সাধারণত ৬ থেকে ১০ মাস বয়সের ডালে চক্রাকারে ২.৫ সে:মি: চওড়া করে বাকল তুলে ফেলে দেওয়া হয় । তবে বাকল চক্রাকারে কাটার সময় ১.২৫ সে:মি: এর বেশি চওড়া না হওয়াই উচিত । আর যে কাণ্ডে করা হবে তা গাছ বিশিষে ১০ সে:মি: এর কম ২৩ সে:মি: বেশি ব্যাস বিশিষ্ট না হওয়াই উচিত । এতে নাইট্রোজেন গ্রহণ ও তৈরি কার্বোহাইড্রেট গাছের বিভিন্ন অংশে প্রেরণ বাধাগ্রস্ত হয় । 

৮। ফল পাতলাকরণ (Fruit thining): কিছু কিছু ফল ছিড়ে পাতলা করে দিলে গাছে কার্বোহাইড্ৰেট জমা হতে থাকে । তাতে পরবর্তী বছর ফল ধারণে সহায়ক হতে পারে । এছাড়া ফল ছিড়ে পাতলা করার পরে গাছের অবশিষ্ট ফল বড় হতে পারে এবং ফলের গুণাগুণ বৃদ্ধি হতে পারে । 

৯। ধুয়া প্রয়োগ করা: গাছের নিচে খড়কুটা পুড়িয়ে চুঙ্গির সাহায্যে গাছের কেন্দ্রীয় এলাকার ভেতর দিয়ে ধুয়ার প্রবাহ যেতে দিতে হয় । এর ফলে কার্বোহাইড্রেট ও নাইট্রোজেনের অনুপাত তাড়াতাড়ি সঠিক মাত্রায় আসে, যা ফল ধারণের কাজ ত্বরান্বিত করে । 

১০। ডালপালা ও পাতাছাটাই করা: কোন কোন সময় গাছের খুব বেশি বাড়তি হলে শাখা প্রশাখা হেঁটে দিতে হয় । এতে গাছে ফুল ও ফল ধারণে সহায়ক হয় ।

ছক- কয়েকটি ফলের ছাঁটাই সময় ও ছাঁটাইয়ের বৈশিষ্ট্য

১১। হরমোন প্রয়োগ (Hormone application): গাছে হরমােেনর অসাম্যতার জন্য ফুল - ফল ঝরে পড়ে । বর্তমানে বিভিন্ন ধরনের হরমোন অত্যন্ত কম মাত্রায় গাছে প্রয়োগে ফুল ধারণ ত্বরান্বিত করে, ফল ঝরা রোধ করে এবং অনেক ক্ষেত্রে ফলের আকৃতি বৃদ্ধি করে । নিচে কয়েকটি হরমোনের উদাহরণ দেওয়া হলো : 

(i) NAA এর হালকা দ্রবণ ছিটিয়ে আনারসের ফলন বাড়ানো যায় । 

(ii) এলাচী ও কাগজীলেবুতে ১০-১৫ পিপিএম প্রয়োগ করে ফল ঝরা কমিয়ে উৎপাদন বাড়ানো যায় । 

(iii) Planofox দ্বারা সিঞ্চন করে বিভিন্ন ফল ঝরা রোধ করে ফলের আকার বৃদ্ধি করে ফলন বাড়ানো যায় ।

১২। শাখা নোয়ানো (Bending of branches): গাছের ডাল টেনে নোয়ায়ে রাখলে নোয়ানো শাখায় বহুপ্রশাখা জন্মায় । লেবু গাছের ডাল টেনে মাটিতে শোয়ায়ে মাটি চাপ দিলেও বহুশাখা প্রশাখা জন্মে । এই শাখা প্রশাখা বাড়ার ফলে বেশি করে ফল ধরে । 

১৩। ভাল জাত ও ফলধারী গাছ রোপণ: যে সব জাতের গাছে বেশি করে ফল ধরে এবং ফলের গুণাগুণ ভাল সে সব জাতের গাছ রোপণ করা উচিত । 

১৪। রোগ ও পোকামাকড় দমন: রোগও পোকার আক্রমণ হলে তাড়াতাড়ি দমনের ব্যবস্থা নিতে হবে । আম গাছের হপার, লিচুর মাইট ও নারিকেলের লাল পিপড়ার আক্রমণ ব্যাকটেরিয়া এবং ভাইরাস দ্বারা গাছ আক্রান্ত হলে বিশেষভাবে ফলন কমায় । এমনকি এগুলোর আক্রমণে গাছের সম্পূর্ণ ফুল ও ফল নষ্ট হতে পারে ।

বিভিন্ন ধরনের ছত্রাক অনুরূপভাবে ফুল ও ফলের মারাত্মক ক্ষতি করতে পারে ।

Content added || updated By

প্রশ্নমালা

অতি সংক্ষিত প্রশ্ন 

১ । ফল গাছে ফল না ধরার কারণের ২টি শ্রেণি কী কী ? 

২। কার্বোহাইড্রেট এবং নাইট্রোজেনের অনুপাতে অসামঞ্জস্য থাকলে তাকে কি ধরনের কারণ বলে? 

৩ । ফল না ধরার বাহ্যিক কারণগুলোর তিনটি উদাহরণ দাও । 

৪ । কোন কোন ফল গাছে ভারী ছাটাই দিতে হয় ? 

৫ । আনারস এবং লেবু গাছে ফলন বাড়ানোর জন্য কি হরমোন ব্যবহার করা হয় ?

সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন 

১ । অফলন্ত বা অফলাৎেপাদক গাছ বলতে কী বোঝায় ? 

২। গাছে উপযুক্ত বয়সে ফল ধরার পরও কী কী সমস্যা দেখা দিতে পারে ? 

৩ । সময়মত গাছ ফলবতী না হওয়া বা ফল না ধরার কারণগুলো কী কী ? 

৪ । অফলন্ত ও ফলন্ত গাছ কাকে বলে ? 

রচনামূলক প্রশ্ন 

১। অফলন্ত গাছকে ফলবতী করার পদ্ধতিসমূহ আলোচনা কর । 

২ । সময়মত গাছে ফল না আসার বা ফল না ধরার কারণগুলো ব্যাখ্যা কর । 

৩ । অফলন্ত ও ফলন্ত গাছ কাজে বলে? গাছ অফলন্ত হওয়ার কারণসমূহ তালিকা বধকর এবং অফলন্ত হওয়ার প্রধান প্রধান কারণ বর্ণনা কর ।

Content added By
Promotion